খুব ছোট্ট আমি, তবে সঠিক মনে নেই কত ছোটো। ৫-৬ বছর বয়স হবে হয়ত, তখন ও বাবা-মা’র সাথে ঘুমাই। হঠাৎ এক রাতে ফিসফিসিয়ে কথার আওয়াজে জাগা পেলাম। ২-৩ জন লোকের সাথে আব্বু কথা বলছেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নাকি গোপন ও নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি অনেক বেশি।বাঙ্গালীরা একাজে অনেক পটু, আমিও যেহেতু বাঙ্গালী তাই ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো আমায় চৌম্বুকের মত টানছিলো। আধো ঘুম আধো জাগরিত অবস্থায় শুনলাম সেই নিষিদ্ধ গল্প। ঐটুকু বয়সে যে টুকু বুঝতে পারলাম তারা অনেক বড় একটা ক্রাইম করতে যাচ্ছে। তারা চুরি করতে যাচ্ছে এমন কিছু একটা যার মূল্যমান অনেক, আর সেটা একটা জনগনের সম্পদ। বৃটিশ বেনিয়ারা যে শুধু শোষণ নিপীড়ন করে গেছে তা নয়। ২০০ বছর শাসন ও শোষণে এমন কিছু ভালো কাজও করে গেছে যা ৭০ বছর নিজেদের শাসনেও করা সম্ভব হয়নি। যাহোক তাদের গুনকির্তোন অন্য আরেকদিন করা যাবে। বৃটিশ শাসকরা যে ভালো কাজটি করেছিল বলে আমার মনে হয়; ভূমি জরিপের সময় প্রত্যেকটা মৌজা মাপ যোগের পর সীমানা নির্ধারণ করে তিন মৌজার সংযোগ স্থলে কনক্রিটের একটা বস্তু পুঁতে দিতো।আমার বিশ্লেষণ বলে দুটি উদ্দেশ্যে তারা কাজটি করে থাকতে পারে। এক পরবর্তী জরিপে সীমানা নির্ধারণ সহজ হবে, দুই বজ্রপাত জনিত দূর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। আসছি দ্বিতীয় কারনে, এমন অযৌক্তিক সন্দেহ হবার কারন কি? পরবর্তীতে আব্বুর কাছেই জানতে পারি যে ঐ কনক্রিটের বস্তুটির মাঝে একটা ধাতব দন্ড দেয়া থাকতো, সম্ভবত পিতল (কপার ব্রাশ) বা তামার তার। দ্বিতীয় কারন টি আরো জোরালো মনে হয়, বিজলী চমকানো অত্যাধিক ভোল্টের বিদ্যুৎ ভূগর্ভে যাবার জন্য দরকার হয় সুপরিবাহী কোন কিছু এবং বিজলী চমকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ও পরিবাহীর মধ্যবর্তী স্বল্প দূরত্ব । অনেক সময় আমরা দেখে থাকি বজ্রপাতের কারনে জঙ্গলের মাঝে লম্বা তাল /নারিকেল গাছটি পাতা বিহীন দাড়িয়ে আছে। তাই আমার ধারনা আগে বজ্রপাত হলে সে বিদ্যুৎ ঐ সকল ধাতব পাত (বিদ্যুৎ সুপরিবাহী) বেয়ে ভূপৃষ্ঠে চলে যেত। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও একটি গুজব প্রচলিত আছে বজ্রপাতের কারনে কেউ মারা গেলে তার কবর ৩/৭/৪০ দিন পাহাড়া দিতে হয়, কে বা কারা যেন মাথা কেটে নিয়ে যায়।এটা আমার কাছে গুজব বলেই পরিচিত, বাস্তবে দেখিনাই। একেক সময় একেক গুজব ছড়ায় বাংলাদেশে। সে সময় ছড়ানো অনেকগুলো গুজবের মাঝে একটি গুজব ছিলো, সীমানা চিহ্নিত এসব কনক্রিটের মাঝে মহা মূল্যবান কিছু আছে। সেটি সংগ্রহ করে যায়গা মত দিতে পারলেই অনাআশে লাখপতি হয়ে যাবে।সেদিন গভীর রাতে লোক গুলি এসেছিল আমার বাবার কাছে, আমার বাবার নখদর্পনে ছিল কয়েক বর্গ কিলোমিটারের সীমানা পিলার গুলি। কারন আব্বু পেশায় একজন আমিন। আরও কয়েকদিন পর ঘরের কোনে পাটের বস্তায় জড়ানো মুটামুটি বড়সড় একটা কনক্রিটের বস্তু দেখতে পাই। সর্বশেষ নতুন বাড়িতে পার হওয়া অব্দি ঘরের কোনায় পরেছিল। এই গুজব ছড়ানোর পিছনে কে থাকতে পারে সে আমার ছোট্ট অনুমান; আমার মতই দুই চার লাইন বিজ্ঞান পড়ে, যে গোটা বিজ্ঞান টা বুঝে ফেলেছিলো। আমারা যারা নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বা ক্যামিস্ট্রি পড়েছি, তারা জানি নিউক্লিয়ার স্টেপ-আপ (ফিউশন ) এবং স্টেপ-ডাউন (ফিশান) রিয়েকশন। নিউট্রন স্ক্যাটারিং এর মাধ্যমে যেমন কম পারমানবিক সংখ্যক মৌল হতে বেশী পারমানবিক সংখ্যার মৌলে যাওয়া যায়। গুজব সৃষ্টিকারী তেমন সামঞ্জস্য করে অধিক চিন্তার ফল হিসেবে গুজব ছড়িয়ে ছিলেন। লাখ কোটি অজানা মাত্রার ভোল্টের বিদ্যুৎ কোনো কিছুর মধ্য দিয়ে পরিবাহীত হলে মূল্যবান কিছু হওয়ায় স্বাভাবিক ? ধরুন তামা হতে সোনা বা প্লাটিনাম হয়ে গেলো, কত দামি, গুজব হলেও কিন্তু যুক্তি আছে!! আমার নাকি স্বভাব ভালোনা, ধান ভানতে গীয়ে সর্বদা শিবের গীত গাই। এত কিছুর সার কথা দেশে বিগত কয়েকদিনে বজ্রপাতের কারনে প্রায় শতকের মত লোকের মৃত্যু। দেশে আগেও বজ্রপাত হতো, এত মানুষ মারা যাবার কথা শুনি নাই। গুজবে সব পিলার গুলি ঘরের কোনাই নয়তো আবার ? এ অনুসন্ধান ও বাপের থেকে পাওয়া। অধিকাংশ যায়গায় জমি-জিরাত নিয়ে ঝামেলা বাঁধলে পিলার খুঁজতে যায় ২-৩ দিন!! জয় হোক গুজবের, জয় হোক গুজব কারীর, ব্যাংক ব্যালান্স হোক মধ্যসত্ব ভুগীদের ।
|
Reciter's blog/
|