আমি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নই, তাই মায়ের জন্য দামোদর দড়িয়া পাড়ি দেয়া তো দূর কি বাত, ভয়ে পুকুরেই নামতাম না। ভিতুর ডিম একটা, যে কিনা পানিতে নামতে ভয় পেত। না তেমন প্রখর স্মরণ শক্তির অধিকারী, প্রতিনিয়ত ভুলে যাই কি করার ছিল আর কি করতে হবে! তাই বিদ্যাসাগর মহাশয় এর মত পাঠ শেষে পাঠ্য বই বা খাতার পাতা ছিড়ে ফেলা হয়নি, উল্টে পরের পাতায় যেতে হয়েছে। দুর্বল চিত্তের হলে যা হয় আরকি? না নিজের উপরে না নিজের স্মরণশক্তির উপরে আস্থা আছে। হ্যাঁ উল্টানো পাতা রেখে দেয়ার মাঝে একটা সূক্ষ্ম দুরভিসন্ধি ছিল, জীবনের কোন সময়ে যদি প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হয় তবে পুরনো পাঠ আবার ঝালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু হলো আর কই। যে পাতা একবার উল্টে রেখেছি তার পুনর্বার পাল্টে দেখা হলো কই? যদিও বা দেখার সাধ ছিল খুব। জীবন যেন প্রতিনিয়ত দৌড়ায়, আর সেই দ্রুততম দুনিয়ার সাথে বেমানান আমি যেন প্রতিনিয়ত সমঝোতা করে যাচ্ছি তাই কিছু পাতা না পড়ে উল্টে রেখে যাচ্ছি। আর একটু একটু করে আমার আমি কে হারিয়ে ফেলছি। হারিয়ে ফেলেছি জীবনের খুব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বোধ, অনুভূতির মৃদু অনুরণন গুলো। যা প্রতিনিয়ত আমায় পীড়া দেয়, ভাবালুতায় ডুবিয়ে রাখে, মুহূর্তের তন্দ্রাই আমায় নিয়ে যায় উল্টোনো পাতাগুলোর জীবন্ত প্রচ্ছদে। ওই প্রচ্ছদে যদি আটকে যেতাম তবে কতই না ভালো হতো, কিন্তু তন্দ্রা ভাঙনো এই জাগানিয়া কতই বিরূপ। এসব কি আমার জড়বাদীতা? নাকি পশ্চাৎপদতা? যদি তা হয় তবে তাই হোক, তবু আমি ফিরে পেতে চাই আমার শৈশবের অফুরন্ত সময়, আর আমাকে ঘিরে নির্মল নিষ্কলঙ্ক চিন্তা জগতে।পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও আমার আমি কে চাই আর একটিবার ফিরে যেতে চাই আমি হয়ে, দুরন্ত শৈশব আর কৈশোরে।
আজ যখন লিখছি তখন নিজের কাছেই অবিশাস্য মনে হচ্ছে “ইন্নালিল্লাহ ওয়া-ইন্না ইলাহে রজিউন” আমাদের শ্রদ্ধেয় মাফুজার স্যার ইহলোক ত্যাগ করেছেন। পরম করুনাময়ের সমীপে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। রসায়নের প্রতি ভাল লাগা বা ভালবাসা উনার কাছেই শিখতে শুরু করি। মাধ্যমিকে অংকের ভিত্তি শক্ত করাও ওনার কাছে। স্মিতহাস্য এই মহান শিক্ষকের গুনকির্তন করে উনার মাহত্ত হয়তো প্রকাশ করতে পারবো না, তবে আমার জীবনে উনার অবদান/প্রভাব একটু হলেও প্রকাশ করতে পারবো। ১৯৯৯ সাল প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে নতুন উর্দি চাপিয়ে নতুন স্কুলে পা রেখেছি। তখনও শ্রেণী শিক্ষক হিসেবে পাইনি স্যার কে, শুনতাম খুব ভালো দুজন বিএসসি (মেজর পদার্থ, রসায়ন আর গণিত) স্যার আছেন আমাদের, যাঁদের দেখা পেতে আমাদের ৭ম ক্লাস পারি দিয়ে অষ্টমে উঠতে হবে। ৮ম শ্রেণীতে উঠে এক স্যার কে পেলাম পাটী গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান অংশে অপর স্যারকে পেলাম বিজ গণিত ত্রিকোনোমিতি ও জৈব বিজ্ঞানে (রসায়নে) ।সেখানেই স্যারের কাছে শেখা রসায়ন বিজ্ঞান কি ? কি তার আলচ্য পরিব্যাপ্তি। তখন হতে শুরু, তার পর আস্তে আস্তে স্যার ও স্যারের শেখানো বিষয়ে আগ্রহ বোধ করলাম, স্যারের ঐ সময়ে ভিজুয়ালাইজেশন দেখে অবাক হতাম। এখন অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচয়ের পর উনাদের ভিজুয়ালাইজেশনের দক্ষতা সম্পর্কে ধারনা করতে পারি। ৯ম-১০ম শ্রেণী ও টেস্ট পরিক্ষার পর স্যারের সহায়তার কথা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। শুধু বলবো নূন্যতম রিসোর্স ব্যাবহার করে একজন পরিক্ষার্থীকে কি করে আত্মবিশ্বাসি করা যায় স্যার তার অনন্য উদহরন। জীবনে ন্যায়-নিষ্ঠা ও সততার যে ভিত সেদিন গড়ে দিয়েছেন, সেটাই যে এখনও বলবৎ। সেকেন্ডারি পরিক্ষা শেষে অন্য স্কুলের বন্ধুরা সবাই যখন বলা বলি করছে ব্যাবহারিকে ২৪ না ২৫ পাবে এই নিয়ে দন্দ্ব, তখন আমরা অনিশ্চিত কত পাবো। সে সময়ের প্রেক্ষিতে রাগ বা দ্বেষ কাজ করলেও পরে শ্রদ্ধায় মাথা আনত হয়েছে, কোনো পাবলিক পরিক্ষায় মেরুরজ্জু সোজা করে দ্বাড়াবার প্রথম শিক্ষা দেবার জন্য। জীবনে গবেষনাগারের প্রথম স্বাদ পেয়েছিলাম উনার হাত ধরেই। রসায়নের সৌন্দর্য্য পুলোকিত করেছিলো গবেষনাগারে সাবান তৈরী, টাইট্রেশনের সমাপ্তিবিন্দুর রং পরিবর্তন, পটাশিয়াম কার্বনেটকে তাপ দিলে যে কোয়ান্টেটিভ অক্সিজেন নিঃরগমন করে তা। কর্ক বোরিং করে কেমন করে ল্যাব্রটরী ওয়াস বোতল তৈরী করতে হয়, পানির তড়িৎ বিশ্লেষন সহ এমন ছোট-খাটো আরও অনেক বিজ্ঞান । যা এক অন্যরকম ভাললাগার তৈরী করেছিলো, অন্যরকম এক পুলক বোধ করতাম।হয়তো সেই অংকুরই আজও বিকাশিত হওয়ার নিরন্তর চেষ্টায় রত। রাগত অবস্থায় স্যার কথা বলতে পারতেন না, রাগে আরো কৃষ্ণ বর্ণ ধারন করতেন আর কেঁপে কেঁপে উঠতেন। এমন চাপা স্বভাবের মানুষ ও যে কাঁদতে পারেন আপত্য স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারেন তা ছিলো অবিশ্বাস্য। মাধ্যমিকে ৫-৬ বছর কাটিয়ে আমাদের বিদায় বেলায় উনাদের ছল ছল চোখের চাহুনি আমার ভিতরের মানুষটাকে অনেক দুমরে-মুচড়ে ফেলছিলো। সেদিনের পর হতে শাষনের বাধ ভেঙ্গে আপত্য স্নেহে বেধেছিলেন। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর স্যারের অসন্তষ, সাধারণ গণিতে প্লাস পেলেও রসায়নে পেলাম না কেনো।প্রিয় মানুষের এমন ছোট ছোট অসন্তষ মনেহয় জীবনে চলার পথের সঞ্জীবনী শক্তি। স্যার যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন, আর এমন মৃদু অসন্তষ বজায় রাখবেন।যেন আপনার এ সন্তানের জীবনী শক্তি ফুরিয়ে না যায়।দূর পরবাস হতে বিয়েগান্ত শিক্ষক/পিতার প্রতি দোআ ও শুভ কামনা। সৃষ্টিকর্তার কাছে, করজোড় মিনতি, পরলোকে উনার যেন জান্নাত নসিব হয়।
জাতিগত ভাবে বলি কিংবা দেশভেদে, সব সূচকে তারাই তত উপরে, যে/যারা কর্মক্ষেত্রে যতটা প্রফেশনাল। প্রফেশনাল বললে হইতোএকটা জেনারালাইজড কথার মত শোনাই, যার ধরাবাধা কোনো মানদন্ড নেই। বর্তমান বাংলাদেশের এক বিরাট সমস্যা হচ্ছে বেকার সমস্যা। কিন্তু কেনো এমন? যে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ কর্মক্ষম যুবা, তারা কর্মহীন থাকলে দেশ এগোবে কি করে? আসুন খোঁজার চেষ্টা করি, কেনো এমন সংকট? একদিকে আমরা বলছি দেশে চাকুরী নেই, অপরদিকে দেশের মাল্টিনেশনাল কম্পানি বা কর্পোরেট হাউজের শির্ষ পদগুলো সহ হাজারো পদ ধারন করে আছে পার্শবর্তী দেশের (ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল) লোকজন। কেনইবা ওভার পেম্যান্ট দিয়ে বিদেশী ইমপ্লোয়ী হায়ার করছেন কর্পোরেট হাউস গুলো? কি দিয়ে ব্যখ্যা করবেন এই দ্বিমুখী সংকট? ঘটনা ১ গত সপ্তাহে গীয়েছিলাম কোরিয়ান ঔরি ব্যংকে, এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার নিজে কাজটি করে দিলেন, এমনকি অফ-পিক আওয়ারে। যদিও ভাষাগত সমস্যা তথাপি চেষ্টা করলেন বোঝার, আমি কি সমস্যায় গীয়েছি। যখন ভাল ভাবে বুঝতে সক্ষম হোন নাই তখন হেল্প নিলেন ব্যংক কল সেন্টারের। এবার আসি কাজের দ্রুততা ও তুলনামূলক টেবিল/ডেস্ক ঘোরার ব্যপারে। প্রথমত; বেঞ্চওয়ার্কে কোরিয়ানরা বরাবর অনেক দ্রুততারসাথে করতে পারে, দ্বিতীয়ত; যেকোনো অফিসিয়াল কাজে এক টেবিলেই আপনার কাজ শেষ, যদিওবা কর্তব্যরত ব্যক্তি উক্ত কাজ না করতে পারেন, প্রয়োজনে তিনি অন্যের সাহায্য নিয়ে করবেন। তবে আপনাকে বা আপনার প্রদানকৃত কাগজ-পত্রের এক টেবিল হতে আরেক টেবিলে আর ঘোরা হবে না। তবে আরেকটি ব্যপার উল্লেক্ষ্য যে, কোরিয়াতে বিজ্ঞান ও গবেষনার বয়ান গুলো নির্বিঘ্নে মানা হয়, আমার আপনার দেশের মতো তাচ্ছিল্য করা হয়না। সামান্য একটা কথা যেটা কিছুদিন আগেই প্রকাশিত, মেয়েরা/মহিলারা সিমুলটেনাস মাল্টিটাসকিং (এক সঙ্গে অনেক কাজ করা) এ অনেক এগিয়ে পুরুষের তুলনায়। আর সেটা অনেক আগে হতে কোরিয়াতে মানা হয় তথা, বেঞ্চওয়ার্ক গুলো অধিকাংশই মহিলাদের দারা পরিচালিত।বিজ্ঞান গবেষনার সাজেশন গুলো তারা দৈব বাণীর মত মেনে চলে। সর্বাপরি, ভোক্তা/ক্লাইন্টের প্রতি তাদের অফিসিয়ালদের অান্তরিকতা বোধ অনন্য। ঘটনা ২ অত্যাবশ্যকীয় একটা কারনে পর পর বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ায় টিসিআই কেমিক্যালস্ এ ফোন করতে হয়। আমি প্রথমেই বাংলাদেশী ভাইটাকে ফোন করি এবং আমার চাহিদা গুলি জানাই। কিন্তু, একজন ব্যবসায়ী(সেলস্ পার্ছোন) তার ভোক্তার সাথে এভাবে কথা বলে জানা নেই। মনে হচ্ছিলো উনি নেশায় আসক্ত নয়তো, আমার ফোনে ঘুম হতে উঠে একরাশ বিরোক্ত নিয়ে কথা বলছেন। যাইহোক, সেটাও সমস্যা নয়, উনি পন্যের স্প্যাসিফিকেশন বলতে পাচ্ছেন না, পন্যের দাম ও ডাকমাশুল কত তাও জানেন না। শুধু ভালো বলার মাঝে যা বলেছেন, ওরা ইন্ডিয়া হতে এসব করে ওদের ফোন দেন। বাধ্য হয়ে যখন ইন্ডিয়ান সেলস্ পার্সন কে ফোন করলাম, তিনি অত্যন্ত সুচারু রুপে সব শুনলেন, পরদিন মেইলে জানায়ে দিতে চাইলেন। দুজনের মাঝে তুলনা করলে দেখবেন ফলাফল একই, কেউ স্প্যাসিফিকেশন বলতে পারেনি, কিন্তু দ্বিতীয় জন জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে, বস্তুত এটাই আমাদের কামনা। ধরুন এবার আপনি একটি কর্পোরেট হাউজের মালিক, তাহলে কোন ব্যক্তিকে চাকুরী দিবেন? আবার আপনি একজন ভোক্তা/কাস্টমার তাহলে দ্বিতীয়বার যদি ফোন করতে হয় কারে করবেন? এখানেই কোনো প্রফেশনের প্রফেশনালীজম কেমন হওয়া দরকার তার একটা ধারনা পেয়ে যাবেন। আমরা চাইলেই হয়তো হাজারটা কারন দাঁড় করাতে পারি। হয়তো অনেকে বলবেন,
- [ ] আমাদের শিখন পদ্ধতি একটা ভুল পদ্ধতি। - [ ] ফ্রেশ গ্রাজুয়েটরা শুধু সার্টিফিকেটই পাচ্ছে কাজের কোনো ব্যবহারিক ধারনা পাচ্ছে না। - [ ] কম্পানি-ইউনিভার্সিটি সমন্বয় নেই, কেমন ইমপ্লোয়ী কোম্পানীর দরকার তা যেমন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কারিকুলাম বোর্ডের কেউ জানেন না, তেমনি কম্পানিগুলো তাদের দরকার জানাতে ব্যার্থ। - [ ] আমাদের নৈতিক শিক্ষার প্রাথমিক যে শক্ত ভিত দরকার তা কখনো গড়া হয়না। - [ ] আমাদের গবেষনা আপাত দৃষ্টে নেই বললেই চলে। আমার চাকুরির ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যা তা একেবারেই অজানা। তাই সে ব্যপারে কোনো কিছু বলতে পারলাম না। আপনার মূল্যবান মতামত সমাদৃত। কথায় আছে “যার ভুত-ভবিষ্যত নেই, সেই বেশি অতীত স্মৃতিকাতর।” আমি মনেহয় খুব বেশিই স্মৃতিকাতর ! খুব খুব মিস করি আমার ফেলে আসা শৈশব-কৈশোর। শৈশবের ঐসব দূরন্তপনাময় দিনগুলি এখন শুধুই স্বপ্ন ।দ্বৈত কিছু নিয়ামক স্মৃতি গুলোকে বিস্মৃতির অতলান্ত হতে সামনে নিয়ে আসে, যেন পঁচা কাদামাটি চাপা মিথেন গ্যাস জল ঠেলে বুঁদ বুঁদ আকারে উঠছে। খুব বেশি স্কুল বদলানোর নজির নেই, আর তাই নিত্য নতুন বন্ধু বানানোর ঝামেলাও ছিলো না আমার।শিক্ষা জীবনের একটা সময়ই শুধু স্কুল পাল্টেছিলাম তাও ১ বছরের জন্য।চেনা বন্ধু-বান্ধব, চেনা পথ, চেনা স্কুল ঘর আর আমার পিতৃতুল্য শিক্ষকমন্ডলী ছেড়ে যেতে হয়েছিল, সম্পূর্ণ এক নতুন পরিবেশে । ইন্ট্রভার্ট আমি কেমন করে যে মিশে গেলাম সবার সাথে, এটা ভাবলেও আমার অবাক লাগে। দূর-দুরান্ত হতে কত সব বন্ধুরা আসতো, আর তাদের হাল্কের মতো দানবীয় সব শরীরের কাছে আমি যেনো চুনো পুঁঠি।তবে বন্ধু ভাবতে একটুও সংকোচ বোধ হয়নি, ব্যাপারটা হয়তো সহজ হয়েছিলো আমার মতো আরো কিছু চুনোপুঁটি বন্ধু পেয়ে।হয়তো বন্ধুত্ব ব্যাপারটা আরো গতি পেয়েছিলো প্রয়াত আখতার স্যারের (হুকো স্যার) কাছে প্রাইভেট পড়তে যেয়ে। ব্যাপার টা সহজ হয়ে গেলো, যখন আরো কজন জুটলো আমার পুরোনো স্কুলের সহপাঠি। সত্যি এক-একটা দিন যেন কাব্যগ্রন্থের এক-একটা পূর্নাঙ্গ কবিতা। দিন শুরু হতো সকাল বেলার পাখির কলতান দিয়ে ঘুম ভাঙ্গা। মুখ-হাত ধুয়ে কিছুক্ষন পড়তে বসা। পুকুরের পানিতে নয় শ্যালোর পানিতে চোখ লাল না হওয়া পর্যন্ত গোসল, সকালের খাবার শেষে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরা। ধুলিময় পথ মারিয়ে স্কুলের গ্রাউন্ডে পৌঁছা। মরিয়ম ম্যামের কঠর অনুশাসন মেনে টিফিন শেষে ক্লাসে ঢুকাও রিতি মতো এক যুদ্ধ। আবার মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম, হঠাৎ মাঝ ক্লাসে যখন প্রচন্ড রাগী মোকছেদ স্যারও দরাজ গলায় আব্বাসউদ্দীনের গান “কূল নাই, কিনার নাই, নাইকো দইড়ার পানি............” গেয়ে উঠতেন। পড়া না পারলে মকবুল হোসেন স্যারের গাল টেনে বলা “কি হাঁসি ফ্যাকোর ফ্যাকোর একো দিন যাবে একো বছর” কথার মর্মার্থ সেদিন না জানলেও আজ তা জ্বলবৎ তরলং। আখতার স্যারের অংক ক্লাসে অমনোযোগী হওয়ায়, কখনও চক আবার কখনও ডাস্টারের ঢিল খাওয়া, আর অংক না পারলে কখনও সখনও একতলায়(সিট বেঞ্চে) দাড়ানো, আবার কখনও দোতলায় (হাই বেঞ্চে) দাড়ানো । বিকেল বেলা প্রায়ভেট পড়ার ফাঁকে স্যার নামাজে বসলে লুকিয়ে বকুল ফুল পারা, সে কি যে রোমাঞ্চকর তা সত্যি অনবদ্য।সামাদ স্যারের পিটি ক্লাস তো নয় যেনো কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের ডিসপ্লে। বিজ্ঞান ক্লাসে যখন বিজ্ঞান পড়াতেন যেন গল্পের ছলে সব শিখিয়ে দিচ্ছেন। বন্ধুদের তালিকা যদিও অনেক লম্বা ছিলো, তারপরও তন্মধ্যে উল্লেখ্য যাদের আর পরের ক্লাসে পাইনি এমন, মেয়ে বন্ধু মরিয়াম, লুৎফুন নাহার, শ্যামলী, হিরা, মিভা.... ছেলে বন্ধুদের মাঝে, হিন্দু ছেলে গুলো বামেশ, লুটু, বিদ্যুৎ আরও কয়েকজন। ছেলে গুলোর মাঝে বিদ্যুতের কথা বেশি মনে পরে, হয়ত একরকম পাপবোধে বিদ্ধো তাই। আমাদের যাদের দূরে বাড়ি তারা অধিকাংশ দিনেই বাসা হতে টিফিন নিয়ে আসতাম। আর টিফিন নিয়ে যতো দুষ্টুমি করতাম তা আজ মনে হলে হাসি পায় নয়তো অপরাধ বোধ কাজ করে। মজার ব্যপার হচ্ছে টিফিনের সময়ে মায়ের সযত্নে তুলে দেয়া মাছ, ডিম বা গোস্তের টুকরো টা কেউই খুঁজে পেতাম না। একজনের টা অপর জনে খেয়ে নিত টিফিনের আগেই, তাই কখনো স্যারের কাছেও এব্যপারে নালিশ যাবার কথা তেমন একটা স্মরণে নেই। তবে আমার এই দুষ্টুমি সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের টিফিন ক্যারিয়ারের কোনো তরকারিই বাদ যেত না, এমনকি যে পাতা-কচুর ডাল বা ভাজি। এক প্রকার জোর করেই নিয়ে খেতাম আমাদের গুলো ওঁকে দিতাম। জানিনা সহজ-সরল নিপাট ভালমানুষ বন্ধুটি আমার সেই জ্বালাতন কিভাবে নিতো। দেখতে দেখতে ২০ বছর শেষ হয়ে ২১ বছরে সময়ের কাঁটা। জানিনা বিদ্যুৎ তুই কোথায় আছিস ? কেমন আছিস? জীবনের ফেরে, অন্য সকলের সাথে কোথাও না কোথা দেখা হয়েছে। তোর সাথে দেখা হবার আর সুযোগ মেলেনি। ছোট্ট বেলার ঐসব দুষ্টুমি গুলো যদি জ্বালাতন মনে করিস তো নিজ গুনে ক্ষমা করিস।
সর্বজন বিদিত একটি কথা বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিকের কাজের লক্ষ্য সামাজ সভ্যতার উন্নতি।কিন্তু কোন সে সমাজ? পারিপার্শ্বিক জনগন, সম্প্রদায় ও তাদের চাহিদা অনুসারে বিশ্বব্যাপিয়া ভিন্নতা থাকলেও; শক্তির(জ্বালানি ) ব্যাবহার, রোগের প্রকোপ, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা এবং দুষন সমস্যা সাধারণ। নেচার সাময়িকীর এ সপ্তাহের বিশেষ ইস্যু: পূর্ব এশিয়ার ৫টি দেশ; হংকং, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিন কোরিয়া ও তাইওয়ান কিভাবে নিজেস্ব চাহিদা পূর্ণ করতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে তারা গবেষনার নিজেস্ব পথ তৈরী ও তার সুফল পেতে শুরু করেছে। চিত্তাকর্ষী ব্যাপার যে, তাদের মৌলিক অর্জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞান এ্যজেন্ডা গুলো তাদের নিজেস্ব চাহিদা পূর্ণ করতে স্পষ্টত ও অদ্বিতীয় । সারা বিশ্বের পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠির কাছে, বিশেষত যারা আধুনিক বিজ্ঞানের রুপকল্পে সমাজ গড়তে আগ্রহী, তাদের কাছে এটি এক আদর্শ অনুকরনীয়।নেচার সাময়িকী আগেও বলেছে, আরও অধিক দাতা ও বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে সামাজিক চ্যালেঞ্জকে নিরুপন ও মোকাবিলায় এভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকটি অর্থনীতির একটা অদ্বিতীয় ইতিহাস থাকে, যার নিজেস্ব কাঠামো ও উন্নয়নের রুপরেখা বিদ্যমান। মালেশিয়ার কথায় ধরা যাক, যেটি এমন একটি ছড়ানো ছিটানো উপসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র, সেন্ডুইসের মত যার দুই পাশে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। ১৯৭০ এর দিকে দেশটি স্বল্প আয়ের পন্য(টিন, রাবার, কোকোআ) হতে অধিক কমোডিটি সম্পন্ন পন্যের ( প্রাকৃতিক গ্যাস, পাম তেল) বাজার জাত শুরু করে। তারপর তারা ফলিত বিজ্ঞান কাজে লাগীয়ে, দ্রুত বর্ধনশীল ইলেকট্রনিক্স শিল্প গড়ে তোলে। ইদানিং কালে তাদের অধিক রপ্তানী পন্যের মাঝে ফলিত বিজ্ঞান গবেষনা পন্য ক্যামিকেলস্ উল্যেখযোগ্য। যদিওবা সফলতা আসতেছে, তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়গের তুলনায় অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত অসাভাবিক ঘটনা এটা যে, মালেশিয়ার প্রায় অর্ধেকের মত গবেষকই মহিলা। উল্লেখ যে, সুজানা ইউসুফ নামে এক কেমিক্যাল প্রকৌশলী, যে কিনা এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যেখানে নিত্য ব্যাবহার্য বর্জ্য হতে জ্বালানি উৎপাদন করা হয়। তার কেরিয়ার পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, যার মাধ্যমে সে পরিবেশ ও সমাজে অবদান রাখতেছে। মালেশিয়ায় অধিকাংশ বিজ্ঞানী মুসলিম, আর সেখানে গড়ে উঠছে, হালাল খাদ্য উপাদান, ঔষুধ শিল্প ও প্রসাধনীর দ্রুত বর্ধনশীল এক ইকোনোমি, ২০১৬ সালে যার বিশ্বব্যাপি মূল্যমান ছিলো ২ ট্রিললি্য়ন ইউ এস ডলার। মালেশিয়া তাদের জন্য ফলিত বিজ্ঞানের অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো নিরুপণ করেছে এবং সামাজিক চাহিদা নিবৃতির জন্য অফিসিয়ালী বিনিয়োগ করছে। শুধু যে তারাই এ কাজ করছে তা নয়, সিঙ্গাপুর, দক্ষিন কোরিয়া ও তাইওয়ান অনেক গুলো ফলিত বিজ্ঞানের প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা ইলেকট্রনিক্স, ফিজিক্স ও ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স সম্মিলিত রুপ। এসবের ফল স্বরুপ তাদের জি ডি পি উর্ধমুখী লাফিয়ে চলছে। সিঙ্গাপুরিয়ান সরকার এসবের কিছু অংশ জাতিয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাস্থ্য সেবা ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চে ব্যায় করছে।যা এশিয়ান জনসংখ্যার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। এই অঞ্চলে সকল পরিমাপের বিচারেই বিজ্ঞান গবেষনায় দক্ষিন কোরিয়া অবিস্মরণীয় । তারা তাদের মোট জি ডি পি’র ৪ শতাংশ ব্যায় করে বিজ্ঞান ও গবেষনা ক্ষাতে। এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে প্রতি শতাংশে গবেষকের সংখ্যা অধিক। গত ২০ বছরে তাদের স্কলারারী নিবন্ধ প্রকাশনের সংখ্যা গগনচুম্বি রকেটের গতির ন্যায়।
উপরোক্ত দেশগুলি পারলেও বাংলাদেশ পারেনি, কেন? কি এমন ঘটতি ছিলো আমাদের? যদিও স্বাধীনতা লাভ বা অার্থো-সামাজিক অবস্থার কথা চিন্তা করি বাংলাদেশ উক্তো দেশ গুলির সমগোত্রীয় । কি কারন ? এখনই সময় আমাদের খোঁজে পাবার। যদি এখনও আমরা বিলম্ব করে বসে থাকি তাহলে আমাদের আরো কয়েক শতক অপেক্ষা করতে হবে? Source: Nature weekly issue, 27 june 2018 গতকাল ঈদ হয়ে গেছে বাংলাদেশে, দেশে থাকতে একটা অলিখিত নিয়ম মেনে আসছিলাম। বিশেষত ঈদ-উল-ফিতর এর আগে বন্ধু-বান্ধব সব মিলে ইফতার আর ঈদের দিন নামাজ শেষে সাক্ষাত, তাও আবার সেই ১ যুগ আগে ফেলে আসা স্কুল মাঠে। যদিও সব বন্ধু-বান্ধবকে পেতাম না, ঐ আসরে তবু এক ভাল লাগা কাজ করতো। শুন্য স্কুল মাঠটায় ঢুকতেই আড়ষ্ঠতা কাজ করতো, মনে হতো, এ আমার চিরায়ত সেই প্রাঙ্গণ নয়, এ অন্য কিছু। তবু স্মৃতি হাতরে খোঁজার চেষ্টা করতাম, ফেলে যাওয় ৬ বছরের খন্ড খন্ড স্মৃতিগুলো। এক সময় ঠিক জীবন্ত হয়ে ধরা দিত, দিন রাত্রির ২৪ ঘন্টার কোন মূহুর্ত কোথায় কাটিয়েছি। স্মৃতি হাতরে অনেক কিছুই পেতাম না, তার মাঝে অন্যতম; দরজা-জানালা বিহীন মাটির তৈরী ঘর গুলি আর তার চালা বিহীন বারান্দা। পশ্চিমের আম-জামের গাছ গুলি। বেশ কিছু না পাওয়ার মাঝেও পেতাম কিছু জীবন্ত হয়ে উঠা স্মৃতি আর তার স্বাক্ষর। হাজারো স্মৃতির মাঝে যা এখন ও সাক্ষর বহন করছে, বর্তমানে মাঠের মাঝের ঐ নারকেল গাছটি। সম্ভবত ২০০৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির কথা, গাছটির সামনে দাড়িয়ে প্রচুর কেঁদেছিলাম । কেন কেঁদেছিলাম জানিনা, তবে কান্নার বাঁধ ভাঙ্গা সে জোয়ার যেনো থামাতেই পাচ্ছিলাম না। অফিসিয়ালী সেদিন স্কুলের সাথে সম্পর্ক ছেঁদের দিন। যদিও চেষ্টা করেছিলাম নিজেকে অনেক দৃঢ় করতে কিন্তু মানষিক ভাবে মনেহয় ততোধিক ভেঙ্গেঁ পড়েছিলাম। স্কুলে থাকা কালে যে স্যার দের মনে হত, অনেক রুক্ষ মেজাজের অধিকারী, তাঁরাই ভিতরে ভিতরে এতটা মাতৃ স্নেহ ধারন করেন জানা ছিলনা। জানা ছিলনা আমাদের এত ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন। সেদিন সব ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন, তাই হয়তো আর নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি । ২ বছর হলো আজ দেশান্তরী, বন্ধুদের সহচর্য আজ নেই বললেই চলে। গতকাল অনেকেই উপস্থিত হতে পারিনি, তবু বলবো চলুক এই সমাহার যুগ হতে যুগান্তর। চলুক অসীমের পানে নিরন্তর এই পথ চলা....... ২৯ চন্দ্র বছর পূর্বে ২৯ রমজানের শুক্রবার দিনের ভোরের সূর্য্য উঠার আগে, ফজর নামাজ ওয়াক্তে নাকি ভূমি স্পর্শ করেছিলাম। ভূমিষ্ঠ হবার পর আজান শেষে নানা নাকি মন্তব্য করেছিলেন, “কোন হাজী ভূমিষ্ট হলো এ সংসারে!” বাবা-মা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন, জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত করেও শিখিয়েছেন ধর্মীয় শিক্ষার খুঁটি-নাটি, দায়ীত্ব, কর্তব্য ও আচরণ বিধি।সেভাবেই বাড়ির বাইরে পাঠিয়েও ছিলেন ২০০৫ সালে, ২০০৫-২০১২ পর্যন্ত ভালই চলছিলো সে মোটিভেশনে, হঠাৎ কোন মোহে বা ঘূর্ণীপাকে সব স্বাতন্ত্রতা হারিয়ে গেলো। বিচ্যুত হলাম, আস্তে আস্তে হারিয়ে গেলাম সময়ের স্রতে। স্রোতে ভাসতে ভাসতে আজ উত্তাল সাগরে।খড় কুটোর মত রমজান মাস পেয়েছিলাম, তীরে ফিরাবার অবলম্বন তাও বিদায় লগ্নে হাত ইশারা করছে, মুখে তার বিদ্রুপের মলিন হাসি। দিন আসে দিন যায়, আমার সেই আমি টা, আর ফিরে আসেনা। আগে ছিলো, না পাওয়ার আকাংখা, বড় হবার স্বপ্ন আর এখন শুধুই টিকে থাকার, বেঁচে থাকার সাধনা। এর মানে এই নয় স্বপ্ন ছুঁইয়ে ফেলেছি; সেই আগ্রহ, মনবল, একাগ্রতা কেনো যেন মুষড়ে পরেছে। ঠিক যেমন কালবৈশাখীর ঝড়ে কচি লাউয়ের ডগা তার তন্তু জড়ানো অবলম্বন হতে মাটিতে লুটোপুটি খায়। আগে যে সকল বিষয়, যতটাই রঙ্গীন স্বপ্নময় আলোক ঝলমলে মনে হতো, আজ ততটায় বর্ণহীন, আলোকহীন সৌর বামনের মত; যে তার রং ও আলক ছটা আমি পাবার আগেই সব হারিয়েছে। তবু আশা, বেঁচে আছি সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত নিয়ামত, সুবাতাস, সূর্য্যের আলো, প্রকৃতির সবুজ আলো ও আকাশের ঐ নীলাভ শুন্যতা নিয়ে। শুকুরিয়া জ্ঞাপন করছি তার এমন ঐশ্বর্য দুচোখ মেলিয়া দেখার, আকন্ঠ পান করবার আর হৃদয় দিয়ে অনুভবের সুযোগ দান করার জন্য।
যথারীতি ল্যাবে ঢুকে কাজ করছিলাম, হাল্কা এক ধরনের শব্দ হলো, সেদিকে আমার মনোযোগ ছিলোনা।আনুমানিক ৩০০ সেকেন্ডের মধ্যেই দরজায় টোকা পড়ল, সেদিকে ফিরে তাকালাম। দেখলাম পাশের ল্যাবের এক ছাত্র, সে প্রথমে আমায় জিজ্ঞাস করলো তুমি কি কোনো এলার্ম শুনলে? আমি বলেছিলাম নাতো? সে তখন আধাভাঙ্গা ইংরেজীতে জানালো এই ঘরে কার্বন মনো-অক্সাইড (CO) লেভেল বেড়ে গেছে তাই সেন্সর এলার্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, CO লেভেল শুন্য (০) পিপিএম স্বাভাবিক , ৯ পিপিএম পর্যন্ত গেলেই তা বিপদজনক। আলাপচারিতার মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয় টেকনিক্যাল সেকশন হতে দুজন লোক এসে সেন্সর চেক করে নব-টব ঘুরাঘুরি করে চলে গেলো। যাহোক ঘটনা স্বাভাবিক, পরে হঠাৎ CO লেভেল বেরে যাবার কারন অনুসন্ধান করে যা পেলাম তা আমার কাজের মাধ্যমেই হয়েছে; সে রসায়ন অন্য আরেক দিন বলা যাবে। এটুকু কোরিয়ার চিত্র; একটু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা সংযুক্ত করতেছি তুলনামূলক আলোচনার স্বার্থে। ২০১৫ সালের দিকের কথা, তত্ত্বীয় পরিক্ষা শেষ করে থিসিস সম্পন্ন করার নিমিত্তে পুরোদস্তুর ল্যাবে কাজ করছি। কাজী আব্দুল লতিফ জৈব গবেষনাগার, আজ পানি সাপ্লাই ঠিক তো কাল বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্য, পরশু লাইট নয়তো এক্সহাস্ট ফ্যানে সমস্যা, সমস্যার যেন অন্ত নেই। এমন করে মানিয়ে নিয়েই চলছিলো দিন, আর প্রতিনিয়ত আমরা রিকুইজিশন দিয়ে আসছিলাম সমস্যা সমাধানে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে দুটি রিকুইজিশনের কোনো সুরাহা হচ্ছিলো না। এক্সহাস্ট ফ্যান ও ব্যালান্স রুমের লাইট ছিলনা। বিদ্যুৎ অফিসের টেকনিসিয়ানদের বললে উনারা জানান নতুন ফ্যান ও বাল্ব সরবরাহ করবে বিভাগ, আর তা করলেই, কেবল তারা সেট করে দিতে পারবে, নচেৎ নয়। তার মানে বিভাগ চায়না উপরোক্ত কাজ গুলো হোক! মাসাধিক পর বিভাগীয় অফিসে শান্ত ভাবে জানতে চেয়েছিলাম কেনো উক্ত কাজ গুলি হচ্ছে না, যাইহোক কোনো একজনের গাফলতির জন্য হচ্ছিলো না। সময় খুব অল্প থিসিস শেষ করতে হবে, মেজাজ খুব বিগরে গেলো, সেদিন গলা চড়িয়ে দুকথা শুনিয়েছিলাম অফিসে। মুটামুটি হুমকি দিয়েছিলাম, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার কাজ না হলে, অফিস ও চেয়ারম্যান স্যারের রুমের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিবো। সেদিন অফিসের সবাই খারাপ ভেবেছিলো, আবার কাজও হয়েছিলো বিদ্যুৎ গতিতে । ১০ মিনিট পরেই অন্তত একটা কাজ বুঝে পেয়েছিলাম। বলতে পারেন এই হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র, আমাদের এলাকাই প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে “সামর্থ্য যার দক্ষিন দুআরী ঘর তার”। প্রথমে বলেছিলাম ৩০০ সেকেন্ড, উদ্দ্যেশ্য তারা কাজে-কর্মে, চিন্তায় ও আন্তরিকতায় কতটা অগ্রসরমান তা বোঝানোর জন্য, অপরদিকে বাংলাদেশে যেখানে ৩০ দিন পার হবার পরও জুজুর ভয় ছাড়া কার্য হাসিল হয়না। আমাদের প্রতিবন্ধী চিন্তাকে সুস্থ সবল রুপ দিতে দরকার সুস্থ সবল চিন্তার ডিক্টেটর।
খুব ছোট্ট আমি, তবে সঠিক মনে নেই কত ছোটো। ৫-৬ বছর বয়স হবে হয়ত, তখন ও বাবা-মা’র সাথে ঘুমাই। হঠাৎ এক রাতে ফিসফিসিয়ে কথার আওয়াজে জাগা পেলাম। ২-৩ জন লোকের সাথে আব্বু কথা বলছেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নাকি গোপন ও নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি অনেক বেশি।বাঙ্গালীরা একাজে অনেক পটু, আমিও যেহেতু বাঙ্গালী তাই ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো আমায় চৌম্বুকের মত টানছিলো। আধো ঘুম আধো জাগরিত অবস্থায় শুনলাম সেই নিষিদ্ধ গল্প। ঐটুকু বয়সে যে টুকু বুঝতে পারলাম তারা অনেক বড় একটা ক্রাইম করতে যাচ্ছে। তারা চুরি করতে যাচ্ছে এমন কিছু একটা যার মূল্যমান অনেক, আর সেটা একটা জনগনের সম্পদ। বৃটিশ বেনিয়ারা যে শুধু শোষণ নিপীড়ন করে গেছে তা নয়। ২০০ বছর শাসন ও শোষণে এমন কিছু ভালো কাজও করে গেছে যা ৭০ বছর নিজেদের শাসনেও করা সম্ভব হয়নি। যাহোক তাদের গুনকির্তোন অন্য আরেকদিন করা যাবে। বৃটিশ শাসকরা যে ভালো কাজটি করেছিল বলে আমার মনে হয়; ভূমি জরিপের সময় প্রত্যেকটা মৌজা মাপ যোগের পর সীমানা নির্ধারণ করে তিন মৌজার সংযোগ স্থলে কনক্রিটের একটা বস্তু পুঁতে দিতো।আমার বিশ্লেষণ বলে দুটি উদ্দেশ্যে তারা কাজটি করে থাকতে পারে। এক পরবর্তী জরিপে সীমানা নির্ধারণ সহজ হবে, দুই বজ্রপাত জনিত দূর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। আসছি দ্বিতীয় কারনে, এমন অযৌক্তিক সন্দেহ হবার কারন কি? পরবর্তীতে আব্বুর কাছেই জানতে পারি যে ঐ কনক্রিটের বস্তুটির মাঝে একটা ধাতব দন্ড দেয়া থাকতো, সম্ভবত পিতল (কপার ব্রাশ) বা তামার তার। দ্বিতীয় কারন টি আরো জোরালো মনে হয়, বিজলী চমকানো অত্যাধিক ভোল্টের বিদ্যুৎ ভূগর্ভে যাবার জন্য দরকার হয় সুপরিবাহী কোন কিছু এবং বিজলী চমকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ও পরিবাহীর মধ্যবর্তী স্বল্প দূরত্ব । অনেক সময় আমরা দেখে থাকি বজ্রপাতের কারনে জঙ্গলের মাঝে লম্বা তাল /নারিকেল গাছটি পাতা বিহীন দাড়িয়ে আছে। তাই আমার ধারনা আগে বজ্রপাত হলে সে বিদ্যুৎ ঐ সকল ধাতব পাত (বিদ্যুৎ সুপরিবাহী) বেয়ে ভূপৃষ্ঠে চলে যেত। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও একটি গুজব প্রচলিত আছে বজ্রপাতের কারনে কেউ মারা গেলে তার কবর ৩/৭/৪০ দিন পাহাড়া দিতে হয়, কে বা কারা যেন মাথা কেটে নিয়ে যায়।এটা আমার কাছে গুজব বলেই পরিচিত, বাস্তবে দেখিনাই। একেক সময় একেক গুজব ছড়ায় বাংলাদেশে। সে সময় ছড়ানো অনেকগুলো গুজবের মাঝে একটি গুজব ছিলো, সীমানা চিহ্নিত এসব কনক্রিটের মাঝে মহা মূল্যবান কিছু আছে। সেটি সংগ্রহ করে যায়গা মত দিতে পারলেই অনাআশে লাখপতি হয়ে যাবে।সেদিন গভীর রাতে লোক গুলি এসেছিল আমার বাবার কাছে, আমার বাবার নখদর্পনে ছিল কয়েক বর্গ কিলোমিটারের সীমানা পিলার গুলি। কারন আব্বু পেশায় একজন আমিন। আরও কয়েকদিন পর ঘরের কোনে পাটের বস্তায় জড়ানো মুটামুটি বড়সড় একটা কনক্রিটের বস্তু দেখতে পাই। সর্বশেষ নতুন বাড়িতে পার হওয়া অব্দি ঘরের কোনায় পরেছিল। এই গুজব ছড়ানোর পিছনে কে থাকতে পারে সে আমার ছোট্ট অনুমান; আমার মতই দুই চার লাইন বিজ্ঞান পড়ে, যে গোটা বিজ্ঞান টা বুঝে ফেলেছিলো। আমারা যারা নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বা ক্যামিস্ট্রি পড়েছি, তারা জানি নিউক্লিয়ার স্টেপ-আপ (ফিউশন ) এবং স্টেপ-ডাউন (ফিশান) রিয়েকশন। নিউট্রন স্ক্যাটারিং এর মাধ্যমে যেমন কম পারমানবিক সংখ্যক মৌল হতে বেশী পারমানবিক সংখ্যার মৌলে যাওয়া যায়। গুজব সৃষ্টিকারী তেমন সামঞ্জস্য করে অধিক চিন্তার ফল হিসেবে গুজব ছড়িয়ে ছিলেন। লাখ কোটি অজানা মাত্রার ভোল্টের বিদ্যুৎ কোনো কিছুর মধ্য দিয়ে পরিবাহীত হলে মূল্যবান কিছু হওয়ায় স্বাভাবিক ? ধরুন তামা হতে সোনা বা প্লাটিনাম হয়ে গেলো, কত দামি, গুজব হলেও কিন্তু যুক্তি আছে!! আমার নাকি স্বভাব ভালোনা, ধান ভানতে গীয়ে সর্বদা শিবের গীত গাই। এত কিছুর সার কথা দেশে বিগত কয়েকদিনে বজ্রপাতের কারনে প্রায় শতকের মত লোকের মৃত্যু। দেশে আগেও বজ্রপাত হতো, এত মানুষ মারা যাবার কথা শুনি নাই। গুজবে সব পিলার গুলি ঘরের কোনাই নয়তো আবার ? এ অনুসন্ধান ও বাপের থেকে পাওয়া। অধিকাংশ যায়গায় জমি-জিরাত নিয়ে ঝামেলা বাঁধলে পিলার খুঁজতে যায় ২-৩ দিন!! জয় হোক গুজবের, জয় হোক গুজব কারীর, ব্যাংক ব্যালান্স হোক মধ্যসত্ব ভুগীদের ।
পরিশীলিত চিন্তার ও যুক্তির জয় কি হবে? আমি অনেকের মুখেই শুনেছি এখনও শুনি, পাকিস্তান ১৯৭১ এর অন্যায়, জুলুম ও অত্যাচারের জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায় না কেন? হ্যাঁ আমারো প্রশ্ন তাই, তবে আমি মনেকরি আর দু এক দশকের মাঝে পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় ভাবে ক্ষমা চাইবে এবং মাশুল স্বরুপ জাপানের মতো একটি সুনির্দিষ্ট পরিমান ডোনেশন দিতে বাধ্য হবে। আমরা যে কজনই দেশের সীমানা পেরিয়ে বাইরে পা বেরিয়েছি, তারা ভারতবর্ষের লোক হিসেবে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকার মানুষের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে থাকি। জানিনা কি কারনে, তবে গায়ের বর্ণের কারনেও হতে পারে। নয়তো, কেউ একজন আগবাড়িয়ে কথা বলেছি, দেশের লোক ভেবে। এমন হর-হামেশাই হয়ে থাকে, পথে বেরিয়ে নূতন কারো সাথে আলাপচারিতা জমে উঠে, আবার কথায় কথায় অনেক কিছুই জানা হয়ে যায়। প্রতিবেশী সকল দেশ হতে আমরা অধিকাংশ বাংলাদেশী চলন-বলন, আচার-আচরণ সামগ্রিক ভাবেই আলাদা। আজ আমার অভিজ্ঞতা লব্ধ ছোট্ট একটা নমুনা শেয়ার করছি। সপ্তাহান্তে কোথাও ঘুরি নয় ঘুমাই।দূরে কোথাও না বেরানো হলে, লম্বা ঘুম শেষে স্বল্প পাল্লার উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা করি। তেমন এক উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরায় বেরিয়েছিলাম আজ বিকেলে, ঘুরতে ঘুরতে গেছোন মেডিকেল ক্যাম্পাস গিয়েছিলাম মিঠুন দা’র সাথে। উনার সাবেক ফার্মাসি ল্যাবে গিয়েছিলাম ঘুরতে। ফিরতি পথে পাকিস্তানী এক গবেষকের সাথে দেখা, যে কিনা মিঠুন দা’র পরিচিত। অনেক কথায় হলো তার সাথে, চৌম্বক অংশটুকু তুলে ধরছি শুধু। কথার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি হিন্দি/উর্দু জানি কি না ? হাজারো বাংলাদেশী বাঙালির মত আমিও একই উত্তর করেছিলাম, “অল্প স্বল্প জানলেও আমরা উর্দু বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করি না। উনার প্রতি উত্তর ছিলো ইন্ডিয়ান, শ্রীলংকান এমন কি নেপালিরা পর্যন্ত খুব সুন্দর কথা বলতে পারে উর্দুতে, কিন্তু বাংলাদেশীরা বলতে চায় না।হঠাৎ করে উনি দেশ ভাগে চলে আসলেন এবং প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ১৯৪৭ এ দেশ ভাগটা ভুল ছিল বলে আপনি মনে করেন ? আমার প্রতি উত্তর ছিল এমন, জানিনা সে সময়ের প্রেক্ষিতে ভুল ছিল কিনা তবে আজকের বিবেচনাই আমি বলবো আলবৎ ভুল। ৫০০০ মাইল দূরের দুটি ভূখন্ড একক রাষ্ট্র হিসেবে চলতে পারেনা। সে দুদিন আগে হোক আর পরে হোক বিভাজন হবেই। আর সেই বিভাজনের ছাই চাপা আগুনে ঘী ঢেলেছে পাকিস্তানি শাসকরা। উনার ভাষ্য অনুসারে বিভাজনের বীজ বপন করেছিলেন খাঁজা নাজিমুদ্দিন, উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষনা করে। এছাড়াও পাকিস্তান শাসক বর্গের শোষন নিপীড়োন তো ছিলোই। বিজিতরা নাকি কোনো ইতিহাস রচনা করেনা, তাই হয়ত শোষন অত্যাচার ও নিপীড়োন সম্বোন্ধে আমরা যতটা ওয়াকিবহাল পাকিস্তানের এপ্রজন্ম ততটা নয়। আরো অনেক পাকিস্তানি মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, আলাপচারিতার এক পর্যায়ে জানতে চেষ্টা করেছি দেশ বিভাগ নিয়ে তারা কতটুকুই জানে । অধিকাংশের জানা বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিলো এটুকুই। তবে আশার বাণী এটুকু যে, কেউ একজন অনুধাবন করেছে পূর্ব-পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) উপর পরিচালিত অন্যায় অত্যাচার, শোষন ও নিপীড়ন ঠিক ছিলনা।
|
Reciter's blog/
|