যথারীতি ল্যাবে ঢুকে কাজ করছিলাম, হাল্কা এক ধরনের শব্দ হলো, সেদিকে আমার মনোযোগ ছিলোনা।আনুমানিক ৩০০ সেকেন্ডের মধ্যেই দরজায় টোকা পড়ল, সেদিকে ফিরে তাকালাম। দেখলাম পাশের ল্যাবের এক ছাত্র, সে প্রথমে আমায় জিজ্ঞাস করলো তুমি কি কোনো এলার্ম শুনলে? আমি বলেছিলাম নাতো? সে তখন আধাভাঙ্গা ইংরেজীতে জানালো এই ঘরে কার্বন মনো-অক্সাইড (CO) লেভেল বেড়ে গেছে তাই সেন্সর এলার্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, CO লেভেল শুন্য (০) পিপিএম স্বাভাবিক , ৯ পিপিএম পর্যন্ত গেলেই তা বিপদজনক। আলাপচারিতার মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয় টেকনিক্যাল সেকশন হতে দুজন লোক এসে সেন্সর চেক করে নব-টব ঘুরাঘুরি করে চলে গেলো। যাহোক ঘটনা স্বাভাবিক, পরে হঠাৎ CO লেভেল বেরে যাবার কারন অনুসন্ধান করে যা পেলাম তা আমার কাজের মাধ্যমেই হয়েছে; সে রসায়ন অন্য আরেক দিন বলা যাবে। এটুকু কোরিয়ার চিত্র; একটু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা সংযুক্ত করতেছি তুলনামূলক আলোচনার স্বার্থে। ২০১৫ সালের দিকের কথা, তত্ত্বীয় পরিক্ষা শেষ করে থিসিস সম্পন্ন করার নিমিত্তে পুরোদস্তুর ল্যাবে কাজ করছি। কাজী আব্দুল লতিফ জৈব গবেষনাগার, আজ পানি সাপ্লাই ঠিক তো কাল বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্য, পরশু লাইট নয়তো এক্সহাস্ট ফ্যানে সমস্যা, সমস্যার যেন অন্ত নেই। এমন করে মানিয়ে নিয়েই চলছিলো দিন, আর প্রতিনিয়ত আমরা রিকুইজিশন দিয়ে আসছিলাম সমস্যা সমাধানে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে দুটি রিকুইজিশনের কোনো সুরাহা হচ্ছিলো না। এক্সহাস্ট ফ্যান ও ব্যালান্স রুমের লাইট ছিলনা। বিদ্যুৎ অফিসের টেকনিসিয়ানদের বললে উনারা জানান নতুন ফ্যান ও বাল্ব সরবরাহ করবে বিভাগ, আর তা করলেই, কেবল তারা সেট করে দিতে পারবে, নচেৎ নয়। তার মানে বিভাগ চায়না উপরোক্ত কাজ গুলো হোক! মাসাধিক পর বিভাগীয় অফিসে শান্ত ভাবে জানতে চেয়েছিলাম কেনো উক্ত কাজ গুলি হচ্ছে না, যাইহোক কোনো একজনের গাফলতির জন্য হচ্ছিলো না। সময় খুব অল্প থিসিস শেষ করতে হবে, মেজাজ খুব বিগরে গেলো, সেদিন গলা চড়িয়ে দুকথা শুনিয়েছিলাম অফিসে। মুটামুটি হুমকি দিয়েছিলাম, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার কাজ না হলে, অফিস ও চেয়ারম্যান স্যারের রুমের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিবো। সেদিন অফিসের সবাই খারাপ ভেবেছিলো, আবার কাজও হয়েছিলো বিদ্যুৎ গতিতে । ১০ মিনিট পরেই অন্তত একটা কাজ বুঝে পেয়েছিলাম। বলতে পারেন এই হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র, আমাদের এলাকাই প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে “সামর্থ্য যার দক্ষিন দুআরী ঘর তার”। প্রথমে বলেছিলাম ৩০০ সেকেন্ড, উদ্দ্যেশ্য তারা কাজে-কর্মে, চিন্তায় ও আন্তরিকতায় কতটা অগ্রসরমান তা বোঝানোর জন্য, অপরদিকে বাংলাদেশে যেখানে ৩০ দিন পার হবার পরও জুজুর ভয় ছাড়া কার্য হাসিল হয়না। আমাদের প্রতিবন্ধী চিন্তাকে সুস্থ সবল রুপ দিতে দরকার সুস্থ সবল চিন্তার ডিক্টেটর।
Reciter's blog/
|